মস্তিষ্ক আমাদের দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এর সুস্থতা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য অপরিহার্য। অন্যদিকে, মানসিক স্বাস্থ্যের অসুস্থতা কোন লজ্জাজনক কিংবা খামখেয়ালির বিষয় না! চলুন আজ এর বিষয়ে জানা যাক....
রুমকির খুব মন খারাপ। গত বার্ষিক পরীক্ষার সময় হাত ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে নি। প্রধান শিক্ষকের কাছে সকল রিপোর্ট দেখানোর পর, স্যার তাকে ৭ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবার অনুমতি দেন। নতুন শ্রেণির শ্রেণি শিক্ষক তাকে খুব হেয় চোখে দেখে, তার রোল একদম শেষের দিকে থাকায় ক্লাসের কেউ তার সাথে মিশতে চায় না, একা করে রাখে। তাই এসব কিছু নিয়ে তার মন খারাপ। ফলে ইদানিং সে স্কুলে যেতে চায় না, বিষয়টি তার মা লক্ষ্য করলেন আর রুমকি কে জিজ্ঞেস করলেন তার হঠাৎ পরিবর্তনের বিষয়ে। সে তার মাকে সব খুলে বললেও তিনি খুব একটা গুরুত দিলেন না বরং বললেন '' এসবই তোমার মনের ভুল, পড়ালেখার দিকে মন দাও । এই বয়সে এতকিছু যে তোমরা কিভাবে শেখো কে জানে !! স্কুলের না যাওয়ার বাহানা গুলো এখন বন্ধ কর।“
এখানে, রুমকির মায়ের কাছে সুস্থ থাকার অর্থ শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমাদের সমাজের বেশিরভাগ মানুষের কাছে সুস্থতা বলতে কেবল “শারীরিক সুস্থতা” ই নির্দেশ করে। তবে বাস্তবিক অর্থে শারীরিক সুস্থতার সাথে সাথে, মানসিক সুস্থতাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
মানসিক স্বাস্থ্যর সাথে আমাদের সংবেদনশীলতা, মনস্তাত্ত্বিকতা এবং সামাজিক কল্যাণ অন্তর্ভুক্ত। এটি আমাদের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি এবং আচরণকে প্রভাবিত করে। আমরা যেকোনো পরিস্থিতি কিভাবে গ্রহণ করি এবং কিভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি তাও নির্ধারণ করতে সহায়তা করে মানসিক স্বাস্থ্য। জীবনে চলার পথে আমরা যখন মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হই তখন আমাদের চিন্তাভাবনা, আচরণ এবং মেজাজ প্রভাবিত হতে পারে।মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টিতে বিভিন্ন কারণ অবদান রাখতে পারে। যেমনঃ
১। মস্তিষ্কের জৈব রসায়ন সংঘটিত জৈবিক কারণ।
২। জীবনের দুর্গম পথের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা।
৩। মানসিক সমস্যা সৃষ্টিকারী পারিবারিক সমস্যা।
মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা অস্বাভাবিক কিছু নয় বরং খুব ই স্বাভাবিক এবং সহায়তা পাওয়া ও সম্ভব। মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাঘাত ঘটলে, অতঃপর পরিপূর্ণ সহায়তা পেলে পুনরায় সুস্থতা অর্জন করা সম্ভব। অনেকের ধারণা মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়ার আহামরি প্রয়োজনীয়তা নেই এবং মানসিক অসুস্থতা বা বিকারগ্রস্ত হওয়া লজ্জাজনক ব্যাপার। এ কারণে মানুষ মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান নন ।
আমাদের সকলের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া প্রয়োজন কেননা ইতিবাচক মানসিক স্বাস্থ্য মানুষকে,
১। নিজের সম্পূর্ণ সুপ্ত সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।
২। জীবনের সকল পর্যায়ের ধকল এবং চাপ সহ্য করতে এবং ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে সাহায্য করে।
৩। উৎপাদনশীল কাজ করতে এবং নিজ নিজ অবস্থানে অর্থবহ অবদান রাখতে সহায়তা করে।
সর্বোপরি সুস্থতা বলতে শুধুমাত্র শারীরিক সুস্থতা বোঝায় না বরং এর সাথে মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতা,অনুভূতিমূলক সুস্থতা এবং জীবনের পরিতৃপ্তিকেও নির্দেশ করে।সুতরাং,মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া আমাদের সকলের-ই একান্ত প্রয়োজন।
コメント